আন্তর্জাতিক মহলের ‘নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি’ রাখাইন প্রদেশে বিভক্তি বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে সু চি অভিযোগ করার এক সপ্তাহের মাথায় জাতিসংঘের এই বক্তব্যে এল।
বিজয় নামবিয়ার বলেন, “আমাদের উদ্বেগের প্রতিক্রিয়ায় মিয়ানমার সরকারের পদক্ষেপই সংকটের সমাধান এবং আন্তর্জাতিক স্থিতি বজায় রাখতে পারে।”
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ উপদেষ্টা নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী সু চিকে রাখাইনে যাওয়ার পরামর্শ দেন এবং সেখানে নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলমানদের নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বস্ত করতে বলেন।
এর আগে গত শুক্রবার চ্যা নেল নিউজ এশিয়াকে এক সাক্ষাৎকারে সু চি মিয়ানমারের রাখাইনে বৌদ্ধদের সঙ্গে মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরোধ বাড়ার জন্যএ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দোষ দেন।
তিনি বলেন, “আমি খুব খুশি হব যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সব সময় বড় ধরনের অসন্তোষ ছড়ানোর কারণ তৈরি না করে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যেম ভালো সম্পর্ক গড়ার জন্যর অগ্রগতি আনতে এবং শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় আমাদের সহযোগিতা করে।”
গত ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের তিনটি সীমান্ত পোস্টে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীদের’হামলায় নয় সীমান্ত পুলিশ নিহত হওয়ার পর রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত জেলাগুলোতে শুরু হয় সেনা অভিযান।
এরপর থেকে সহিংসতায় বহু রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে, সহিংসতা থেকে বাঁচতে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে।
সেনা অভিযানে রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ, ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া এবং বেসামরিকদের হত্যাোর অভিযোগ করেছেমানবাধিকার সংগঠনগুলো। তবে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও সরকার তা অস্বীকার করেছে।
ওই এলাকায় বিদেশি সাংবাদিক ও ত্রাণকর্মীদেরও প্রবেশ করতে দেয়নি মিয়ানমার সরকার।
সু চি ওই সাক্ষাৎকারে বলেন, পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে হামলার বিষয়টি এড়িয়ে সবাই যদি শুধু পরিস্থিতির নেতিবাচক দিকে মনোযোগ দেয় তাহলে তা কোনো সুফল বয়ে আনবে না।
বিরোধপূর্ণ ওই অঞ্চলে গিয়ে মঙ্গলবার মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে আইনের মধ্যে অভিযান চালানোর আহ্বান জানান জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান।
রোহিঙ্গা-রাখাইন সমস্যাকর স্থায়ী সমাধানে করণীয় নির্ধারণে কাজ করছে আনানের নেতৃত্বাধীন কমিশন, সেখানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মিয়ানমার সরকারের লোকও রয়েছে।
রাখাইনের এ সমস্যা নোবেলজয়ী সু চির রাজনৈতিক জীবনের অন্যতম বড় সঙ্কট হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। শান্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েই তার দল এ বছরের শুরুতে ক্ষমতায় আসে।
রোহিঙ্গাদের বিষয়ে নীরব থাকায় মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী সু চির সমালোচনা হচ্ছে নানা মহল থেকে। তার নোবেল শান্তি পুরস্কার ফিরিয়ে নেওয়ার দাবিও উঠেছে।
এর আগে ২০১২ সালেও রাখাইনে বৌদ্ধ ও রোহিঙ্গা মুসলমানদের মধ্যের ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়। সেবার শতাধিক মানুষ নিহত হওয়ার পর থেকে দুই সম্প্রদায় রাখাইন অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় আলাদাভাবে বসবাস করে আসছিল।